Fooo

<-hello world->

শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১

অদৃশ্য বর্তমান


আমি মফঃস্বল শহরের ৮/১০ তা ছেলের মতই একটা সাধারন ছেলে। সবার মত আমার জিবনেও ভালবাসা আসে কিন্তু আর ১০ জনের ভালবাসার মত না। আমার ভালবাসা আকাশের মত বিশাল। মিথিলা আমার ভালবাসা। ওর সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে।
দিনটি এখনো মনে আছে ১০ জুলাই বিশ্বকাপ ফুটবল চলছিল।


ও আমায় অন্য কেউ মনে করে add দিয়েছিল। দুই একদিন কথা বলার পর মোটা-মুটি free হয়ে যাই।
ও তখন inter 1st year এ পড়ে আর আমি s.s.c দিবো ।
জুলাই এর শেষ দিকে ওর সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।


আমার কোন মেয়ে বন্ধু ছিল না তাই ওর প্রতি আমার আকর্ষণ বাড়তে থাকে। কয়েকদিনের মধ্যে আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই। ও রাত জাগলে আমি রাত জাগতাম, আমি রাত জাগলে ও রাত জাগত। আমরা একে অপরকে sweet heart বলে ডাকতাম।
একে অপরের সাথে সব শেয়ার করতাম। অনেক মজা করতাম। এক সময় আমাদের এই বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থাকলো না। এক সময় বুঝলাম মিথিলার প্রেমে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিয়েছি। নিজেও বুঝিনি কখন ওর প্রেমে পড়েছি, বুঝলাম অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি।


মিথিলা ভালবাসাকে কেন যেন অনেক ভয় পেত। তার কারণ আমি তখন ও জানি না। ওকে কিভাবে আমার ভালবাসার কথা খুলে বলবো বুঝতে পারছি না। এক ফ্রেন্ড কে দিয়ে ওকে কথাটি শুনাই। মিথিলা বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেয়।
ওর সাথে আমার একবার দেখাও হয়, দিনটি ছিল ৪ সেপ্টেম্বর। ওর একটি গল্পের বই লাগতো, ও আমায় বলে। এই গল্পের বই দেয়ার বাহানায় আমি ওর সাথে দেখা করি। ওকে দেখে, আমার বুকে ওর জন্য যে চারা গাছ জন্মেছিল তা তর তর করে বেড়ে বৃক্ষে পরিণত হয়। ওকে ফেসবুকে যত সুন্দর লাগে বাস্তবে আরও বেশি সুন্দর লাগে। সমস্যা থাকায় ও কোন কথা বলতে পারলো না বইটা নিয়ে চলে যায়, আমি ওর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।


ওই রাতেই ফেসবুকে প্রপোজ করি... ও তো পুরা অবাক... ও কিছুতেই মানে না। সারা রাত বুঝানর চেষ্টা করলাম ও কিছুতেই মানে না। পরের দিন ও ফেসবুকে chat হয়। ও বলে সাহস থাকলে আমার সামনে এসে বল।
Coaching বাদ দিয়ে ওর বাসা খুজে বের করি কিন্তু ও বের হয় না। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। রাতে ও ফেসবুকে আসে, আমায় অনেক বুঝায়। কিন্তু আমাকে বুঝায় কার সাধ্য?
ও বলে এর ভবিষ্যৎ নেই আমি বড় তুমি ছোট। ওই দিন chat করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল। রাত প্রায় ৩ টা। আমার রুমের লাইট জ্বালান দেখে বাবা মা আসে...
অনেক বকা ঝকা দিয়ে মোবাইল নিয়ে যায়। পরের দিন ও মোবাইল দেয় না। এদিকে আমার মনের অবস্থা অনেক খারাপ। কারো সাথে কিছু শেয়ার করতে পারছিলামনা।
এমনকি বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথেও না...



তখন স্বার্থপরের মত অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে মারা যাবার চেষ্টা করলাম। এই কাজে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়...
ফ্রেন্ডরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়... মিথিলা এসবের কিছুই জানত না... বিকালে ও আমার এক ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে ঘটনা জানে। ও ভাবে আমি হয়ত অভিনয় করছি। ও দিন মিথিলার ছোট খালা মারা যায়... মিথিলার মনের অবস্থা খারাপ তার উপর আমার পাগলামি... ও পুরো হতভম্ব হয়ে যায়।



ওদিকে আমার অবস্থা খারাপ। মিথিলা মিথিলা বলে বির বির করতাম। ডাক্তার বলে যদি মিথিলার সাথে আমার দেখা করানো যায় তাহলে সুস্থ হতে পারি। আমার বাবা মোবাইল আর ফেসবুকের মেসেজ দেখে... তার পরদিন রাতেই মিথিলার বাসা খুজে বের করে আমার বাবা ওদের বাসায় নিয়ে যায়। মিথিলার খালা মারা যাওয়ার কারণে সবাই আপসেট... ওর বাসার কেউ দেখা করে না... এদিকে ঘটনা পুরো শহরে ছড়িয়ে যায়। শুরু হয় দুই পরিবারে সমস্যা।



আমি তখনও ঘুমের ঘোরে। সব দোষ এসে পড়ে ওর ঘারে। ও বেচারির কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।
ওর cousin ওর id deactivate করে দেয়। আমার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ও নতুন id খোলে...
মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙলে ফেসবুকে গিয়ে ওর মেসেজ এর উত্তর দিতাম।
ও ঠিক করে আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করে ও আমাকে সুস্থ করে তুলবে। এভাবে গোপনে আমাদের যোগাযোগ চলতে থাকে... ধীরে ধীরে মিথিলা বুঝতে পারে আমি সত্যিই ওকে ভালবাসি। ও ভালবাসাকে কেন যেন ভয় পেত তবু ও আমাকে সত্যিই ভালবাসতে থাকলো। শুরু হল আমাদের ভালবাসার গল্প...



মাঝে আসলো ওর জন্মদিন... ওকে কি দেবো? কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না... অনেক ভেবে আমার পরীর জন্য একটা
Showpis আর একটা বড় card কিনলাম। ও আমায় আগেই বলেছিল ও কোন গিফট নিতে পারবে না। ওকে শুভেচ্ছা জানানোর পর ও জানালো যেভাবেই হোক ও আমার সাথে দেখা করবে।


সেদিন স্কুলে ফ্রেন্ডরা হলি ( রঙ খেলা ) খেলছিল... আমি স্কুল শেষ করে ওর সাথে দেখা করতে যাব... হটাৎ শুরু হল তুমুল বৃষ্টি ...
বৃষ্টির মাঝে ওর জন্য ওর গোলাপ কিনলাম... ভাবছিলাম এত বৃষ্টিতে ও কি আসবে?
একটু পর দেখলাম ওর বান্ধবী রিমিকে নিয়ে ও আসছে... ওদের কাছে কোন ছাতা না থাকায় ওরা ভিজে একাকার...
মিথিলা আমাকে দেখে বলল রঙ মেখে ভুতের মত সেজেছ কেন?
আমি কিছুই বললাম না, শুধুই হাসলাম... ওকে দেখে আমার এত আনন্দ হল যে বলার মতনা...
ওকে গিফট আর গোলাপ দিলাম...
ও গোলাপ টা রেখে সব বাকি সব ফিরিয়ে দিয়ে বলল খুব কষ্ট হচ্ছে ফিরিয়ে দিতে কিন্তু কি করবো কিছুই করার নেই ।
ওর ফ্রেন্ড চলে গেল ও আর আমি দুজন নির্জন রাস্তায় হাঁটছি... বৃষ্টির কারনে রাস্তায় কোন লোক ছিল না রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় মিথিলা পড়ে যাচ্ছিলো... আমি ওর হাত ধরলাম ও লজ্জায় হাসল...



একদিন ৩ ফ্রেন্ড মিলে কোচিং ফাকি দিয়ে ঘুরছি এমন সময় মিথিলার মেসেজ তার সাথে এই মুহূর্তে দেখা করতে হবে, সে আমার এলাকায়...
ফ্রেন্ড দের রেখে ছুটলাম ওর কাছে গিয়ে দেখি ও আর ওর এক ফ্রেন্ড দাড়িয়ে... ওর ফ্রেন্ড রিমি সবসময় আমাদের সাহাজ্জ করতো... ওকে আমি দিদি বলে ডাকতাম...
ওখানে গিয়ে শুনি এক ঘণ্টা পড়ে ওর এক স্যার এর কাছে পড়া আছে... জরুরী এক কাজে তাকে বাসায় যেতে হবে তাই মিথিলার সাথে আমাকে থাকতে হবে...।
নিজের এলাকায় একটি মেয়েকে নিয়ে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যায়... আমি ওকে আমার সাথে এক জায়গায় যাবার কথা বললাম... ও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল... রিকশা করে দুজনে গেলাম... দুজনে একসাথে অনেক্ষন ছিলাম...



আমি ওকে গান গাইতে বললাম...ও অনেক বাহানা করে শেষ পর্যন্ত গাইল... মিথিলা তার অপূর্ব গলায় রবীন্দ্র সঙ্গিত গাইছিল আর মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছিলাম... আর একদিন এভাবে দেখা করতে গিয়ে ওর এক আঙ্কেল ওকে দেখে ফেলে... সে বাসায় বলে দেয়...
মিথিলাকে বাসায় মারে... অনেক কষ্টে মিথিলা প্রমান করে ওই আঙ্কেল ভুল দেখেছে... এরপর থেকে আমরা দেখা করতাম না কারন আননদ পার জন্য আমরা কেও ভালবাসাকে হারাতে রাজি নই...
প্রায়ই আমার বাবা আমার মোবাইল নিয়ে যেত... সপ্তাহের পর সপ্তাহ কথা হত না... আমি ওর সাথে দেখা করি স্যার এর বাসায় যাই না এই সন্দেহে আমাকে অনেক মারত...
আমি মিথিলার জন্য সহ্য করতাম...



আমার বাবা প্রায়ই মিথিলাকে ভয় দেখাতো আমার সাথে যোগাযোগ করলে ওর মাকে জানিয়ে দেবে... একদিন জানিয়েও দেয়...
মিথিলার মা মিথিলাকে মারে, মোবাইল নিয়ে যায়...
আমি এসবের কিছুই জানতাম না... আমি দিনের পর দিন ওর স্যার এর বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকি কিন্তু ও আসে না...
একদিন দেখি মিথিলা ওর বাবার সাথে আসছে... ও আমায় দেখতে পায়নি... আমি ওকে ইশারা করলাম ও তাও দেখতে পায় নি... যখন বাসায় যাচ্ছিলো মাথা নিছু করে যাচ্ছিলো ওর মুখ ঢাকা ছিল।
ওর স্যার এর বাসার সাথে আমার এক ফ্রেন্ড এর বাসা। আমি ফ্রেন্ড এর বাসায় গেলাম, জানালার পাশে ও বসেছিল... ওকে অনেক ডাকলাম কিন্তু ও শুনতে পায় নি...
তাকিয়ে দেখি ওর গালে হাতে অজস্র মারের দাগ।
খুব কষ্ট লাগছিলো ওর জন্য... ও যখন বাসায় ফিরে যাচ্ছিলো তখন দেখি ও কাঁদছে আর করুন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে...
প্রায় দুই মাস আমাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ হয়নি...
প্রায় দুই মাস পরে মিথিলা আমার সাথে যোগাযোগ করে।
আমার যে কি ভালো লাগছিলো আমি বুঝতে পারবো না...
এখনো ওর পরিবার ওকে অপমান করে, জেরা করে...
তবুও আমাদের ভালবাসার প্রদীপ ও জালিয়ে রেখেছি...



তারপর একদিন আমার বাবা ওকে ফোনে অনেক অপমান করে। ও কষ্টে অপমানে বলে ও আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখবে না...
আমি চুপ করে রইলাম... অনেক্ষন কাদার পর ওকে GOOD BYE লিখে মেসেজ দিলাম... তারপর মোবাইল বন্ধ কর অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে বাসে উঠে গেলাম তারপর আর কিছু মনে নেই...
বন্ধুদের মুখে শুনেছি বাসের হেল্পার আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে আমার পকেতে থাকা মোবাইল বের করে বাসায় ফোন দেয়। তারপর আমার পরিবার আর বন্ধুরা আমাকে নিয়ে যায়।
সুস্থ হবার পর জানলাম মিথিলা আমার জন্য পাগলের মত হয়ে গেছে...আমার অবস্থা জানার জন্য ও অস্থির হয়ে গিয়েছিলো। মোবাইল ওপেন করতেই অজস্র মেসেজ...
আমি ওকে ফোন দিলাম... ও কাঁদতে কাঁদতে বলছে...
আমি না হয় ভুল করেছি... তুমি কেন এমন করলে? শাস্তি আমায় দিতে? আমি আর কোনদিন তোমাকে ছেড়ে যাব না...
আমিও প্রতিজ্ঞা করলাম ও যদি পাশে থাকে আর কখনো এমন করবো না...
আমার বাবা মা এখন মোটামুটি মেনে নিয়েছে... কিন্তু মিথালার পরিবার মেনে নেয় নি... লুকিয়ে লুকিয়ে মিথিলা এখনো আমার সাথে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছে...



ওর পরিবার হয়ত আমাদের অসম ভালবাসা মানবে না। মিথিলা তার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। পরিবারের অনুমতি ছাড়া কখনো বিয়ে করবো না হয়ত এই কারনে আমারা এক হতে পারবো না...
আমি চাইনা ও ওর পরিবারকে কষ্ট দেক...
জানিনা ওকে পাব লিনা তবু আমি আমার লক্ষি পাগ তাকে অনেক ভালবাসি...
মিথিলা আর অভির জন্য আমার শুভ কামনা রইলো... দোয়া করি ওরা যেন এক হতে পারে...
সবাইকে ওদের জন্য দোয়া করার অনুরোধ করছি...

প্রস্থান -হেলাল হাফিজ

এখন তুমি কোথায় আছ কেমন আছ,পত্র দিয়ো ।
এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালীর তালপাখাটা খুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে,পত্র দিয়ো।
ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মত খুব ব্যথিত,ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে,পত্র দিয়ো । কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে ,
কোন স্মৃতিটা উস্কানি দেয় ,ভাসতে বলে প্রেমের বাণে,পত্র দিয়ো,পত্র দিয়ো।


আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো,আপত্তি নেই।
গিয়ে থাকলে আমার গেছে,কার কী তাতে ?
আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে পাঁচ দুপুরে নিজনতা খুন করেছি ,কি আসে যায় ?
এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে ,
এক মানবী কতোটাই বা কষ্ট দেবে ।